Recent News

হতাশ বিনিয়োগকারীরা তলানিতে শেয়ারবাজার

Table of Content

তলানিতে নেমেছে দেশের শেয়ারবাজার। টানা দরপতনে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে শেয়ারবাজারে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক। ৫ আগস্টের পর দেশের অর্থনীতির অন্যান্য খাতে পরিবর্তন এলেও ব্যতিক্রম শুধু শেয়ারবাজার। বৃদ্ধি নয়, কমছে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন। কমছে তারল্য প্রবাহ। গত আট মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক হাজার পয়েন্টের বেশি কমেছে। আর ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। সবকিছু মিলে শেয়ারবাজার গভীর খাদের কিনারায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের এ অবস্থার পেছনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেতৃত্বের দুর্বলতা দায়ী। এ অবস্থায় বাজারসংশিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এখনো ঢালাওভাবে কমছে শেয়ারের দর। শেয়ারবাজারে অস্থিতিশীলতা ঠেকানো ও আস্থা ফেরাতে করণীয় নিয়ে গত ১১ মে বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বৈঠকে অংশ নেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক প্রমুখ। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা শেয়ারবাজারের উন্নয়নে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে : ১. দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী যেসব বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা রয়েছে, সেগুলোকে দ্রুত শেয়ারবাজারে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। ২. গত ২০-৩০ বছরে দেশের বেসরকারি খাতে যেসব ভালো ও বড় বড় কোম্পানি গড়ে উঠেছে, সেগুলোকে প্রণোদনা দিয়ে বাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়া। ৩. বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ দল এনে তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজার সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া। ৪. পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ। ৫. বড় বড় কোম্পানি যাতে ব্যাংকঋণ নেওয়ার বদলে শেয়ারবাজারে বন্ড বা শেয়ার ছেড়ে পুঁজি সংগ্রহে আগ্রহী হয়, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। ওই বৈঠকের পরও বাজারে কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। ভয়াবহ দরপতনের মধ্যেই লেনদেন চলছে শেয়ারবাজারে। বাজারে তালিকাভুক্ত সব ধরনের কোম্পানির শেয়ারের ঢালাও দরপতন চলছে গত কয়েক মাস ধরে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক গত ৮ মে ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৭৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ তিন দিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ১৪০ পয়েন্ট। এতে ২০২০ সালের ২৪ আগস্টের পর সূচকটি সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে। ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট সূচকটি ৪ হাজার ৭৬২ পয়েন্টে ছিল। গত বছরের ১৮ আগস্টের পর নতুন কমিশন গঠন করা হয়। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শেয়ারবাজার ভালো হবে প্রত্যাশা করা হলেও তা হয়নি। উল্টো নতুন কমিশনের নিয়োগের দিন থেকে গত ১৫ মে পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১ হাজার ১২৩ পয়েন্ট। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার দিন লেনদেনের শুরুতে ডিএসইএক্স সূচকটি ছিল ৫৯০৪ পয়েন্ট। যে সূচকটি সর্বশেষ ৮ মে ১ হাজার ১২৩ পয়েন্ট কমে ৪৭৮১ পয়েন্টে। গত আট মাসে বাজার মূলধন অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের ধারণ করা মোট শেয়ারে মূল্য কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। গত বছরের ১৮ আগস্ট বাজার মূলধন বা সব সিকিউরিটিজের দাম ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। যা ৮ মে নেমে এসেছে ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকায়। এই সরল হিসাবে বিনিয়োগকারীদের সিকিউরিটিজের দাম কমেছে প্রায় ৬০ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে আরও অনেক বেশি।

তলানিতে শেয়ারবাজার
তলানিতে শেয়ারবাজার

বাজার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি করতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন কয়েকদিন ধরে। বিনিয়োগকারীরা বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারণের দাবি জানান। বাজারে ধারাবাহিক পতনের জন্য বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অযোগ্যতা ও শেয়ারবাজার নিয়ে জ্ঞানশূন্যতাকে দায়ী করে আসছেন বিনিয়োগকারীরা।

 

জানতে চাইলে শেয়ারবাজারের পুরোনো বিনিয়োগকারী আতাউল্লা নাইম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগকারীরা পুরোপুরি হতাশ। শেয়ারবাজারে শুধু টানা পতন হচ্ছে, এটা অযোগ্যতার কারণে। মাসের পর মাস সংস্কারের গল্প বলে সময় কাটিয়ে দেওয়া হাজার বাজার থাকবে। ততদিনে শেয়ারবাজারে সব পুঁিজ হারিয়ে ফেলবে বিনিয়োগকারীরা। সংস্কার ও বাজার স্থিতিশীল রাখা একই সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু বর্তমান কমিশন শুধু সংস্কারের কথা বলছে। বাস্তবে কী সংস্কার হচ্ছে বা সেই সংস্কার শেয়ারবাজার উন্নয়নে কোনো ধরনের কাজে আসবে কি না সেটা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। কেতাবি চিন্তা থেকে বের হয়ে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে বাজারে আস্থা ফিরবে না। বিনিয়োগকারীদের হতাশাও কাটবে না।

Tags :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Popular News

Recent News

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit.

© 2025 newsus. All Rights Reserved by BlazeThemes.